বন, ২৭ আগস্ট – জার্মানির বন নগরীতে বাসুগ এবং সেরাজি ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে বর্ণবাদ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রথম শিল্প ও সাহিত্য উৎসব অনুষ্ঠিত হল শনিবার। বন নগরীর প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত মিগ্রাপোলিসে অনুষ্ঠিত এই উৎসবে ছিল বর্ণবাদ ও বৈষম্যের উপর তথ্যচিত্র, আলোচনা, চিত্র প্রদর্শনী, গান, কবিতা ও ছোট গল্প।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বন নগরীর ইনটেগ্রেশন দপ্তরের প্রধান কোলেটা মানেমান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাসুগ চেয়ারম্যান বিকাশ চৌধুরী বড়ুয়া, জার্মান-আফ্রিকান সেন্টার এর প্রতিনিধি ক্লাউস থুসিং এবং মিগ্রাপোলিস এর কর্ণধার ডঃ খিদির এরেন চেলিক।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তাগণ সমাজের প্রতিটি পর্যায়ে বর্ণবাদ এবং বৈষম্য দূর করতে বিচ্ছিন্নভাবে নয় বরং ঐক্যবদ্ধভাবে এবং সংঘবদ্ধভাবে কাজ করতে আহ্বান জানান। তাঁরা বলেন, শুধুমাত্র কিছু মানুষ স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে চেষ্টা চালানোর মধ্য দিয়ে সমাজকে বর্ণবাদ এবং বৈষম্য মুক্ত করা সম্ভব নয়। তাই প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে সমাজের উচ্চ পর্যায় পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে এবং খাতে পেশাদারিত্বের সাথে বৈষম্যবিরোধী কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রধান অতিথি মানেমান বলেন, শুধুমাত্র সহনশীলতা দিয়ে বর্ণবাদ এবং বৈষম্য দূর করা সম্ভব নয়। কারণ সহনশীলতা পরিবর্তনশীল। আজ কাউকে সহ্য করা যেতে পারে, কিন্তু কাল হয়তো তাকে সহ্য করা নাও হতে পারে। তাই সহনশীলতার পরিবর্তে আমাদের সমাজে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করতে হবে। এছাড়া এই বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে অভিবাসীদের সংগঠনগুলোকে আরও সক্রিয় ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে ডঃ কেইথ হামাইম্বু নির্মিত ডকুমেন্টারি ছবি „আমি সর্বদা শান্তভাবে চলে যাই“ (Ich gehe immer leise)। বন নগরীর ইন্টেগ্রেশন সেন্টার, এন আর ডাব্লিউ প্রাদেশিক সরকার এবং এন আর ডাব্লিউ রাজনৈতিক শিক্ষা কার্যক্রম এর অর্থনৈতিক সহায়তায় অনুষ্ঠিত হয়েছে এই উৎসব। সহযোগী সংগঠন হিসেবে ছিল জার্মান-আফ্রিকান সেন্টার এবং বন নেটয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট। উৎসবের মিডিয়া পার্টনার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম আওয়ার ভয়েস।
উৎসবের অংশ হিসেবে অর্থবহ এবং দৃষ্টিনন্দিত চিত্র প্রদর্শন করেন বাংলাদেশি-জার্মান আঁকিয়ে মারুফ আহমেদ, মীর জাবেদা ইয়াসমিন, হোসাইন আব্দুল হাই, জার্মান আঁকিয়ে কারিন কারোলা পাপে এবং সেনেগালিজ আঁকিয়ে তাও-এঙ্গাগ্নে মালেনি সেনে। উৎসবের প্রতিপাদ্য বিষয়ে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন জার্মান-তুর্কি কবি ডঃ খিদির এরেন চেলিক, কবি হাইকে ভান ডেন ব্যার্গ, প্রফেসর ডঃ আনাকুটি ভালিয়ামাঙ্গালাম, মীর জাবেদা ইয়াসমিন এবং হোসাইন আব্দুল হাই। ছোটগল্প পরিবেশন করেন ডঃ খিদির এরেন চেলিক এবং বেরনিস লিসানিয়া একুয়ালা আকুয়ালা।
বর্ণবাদ ও বৈষম্য বিরোধী গান পরিবেশন করেন জার্মান-বাংলাদেশি শিল্পী আব্দুল মুনিম এবং জার্মান-আফ্রিকান শিল্পী সাইকো আগুস্ত বালদে। এছাড়া কবি মোবাশ্বের হোসাইন সুমন এবং পরিকল্পনাবিদ মোঃ খুরশীদ হাসান সজীবের বিষয়ভিত্তিক কবিতা, রিয়াজুল ইসলাম সম্পাদিত সাময়িকী ‘সীমান্ত’ এবং বিভিন্ন তথ্য সমৃদ্ধ যোগাযোগ উপকরণ ছিল উৎসবের প্রদর্শনীতে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উভয় সংগঠন বর্ণবাদ ও বৈষম্য বিষয়ে জনসচেতনা এবং ধর্মীয় বিশ্বাস, লিঙ্গ এবং অন্যান্য কারণে বর্ণবাদ ও বৈষম্যের শিকার মানুষদের রক্ষা করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চায়। বিশেষ করে শিল্প ও সাহিত্য এ ব্যাপারে একটি ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে এবং দীর্ঘ সময় ধরে সামাজিকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। এই কারণে, দৈনন্দিন জীবনে এই প্রভাবগুলি স্থায়ীভাবে শক্তিশালী করার জন্য বন নগরীতে শিল্প ও সাহিত্য উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়।